রেজিঃ ঢ০০৪৯, স্থাপিতঃ ১৯৪৬ ইং

সাতক্ষীরা জেলা

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা সাতক্ষীরা। সাতক্ষীরার পূর্বে খুলনা, উত্তরে যশাের, পশ্চিমে পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা এবং দক্ষিণে মায়াময় সুন্দরবন ও বঙ্গোপসাগর অবস্থিত। ১৯৮৪ সালে জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে সাতক্ষীরা। লৌকিক আচার-আচরণ, বিশ্বাস আর পৌরাণিকতায় সমৃদ্ধ এক জনপদ এই সাতক্ষীরা জেলা।

একনজরে সাতক্ষীরা জেলা

প্রতিষ্ঠাকাল

১৯৮৪

আয়তন

৩,৮৫৮.৩৩ বর্গকিলােমিটার

উপজেলা

৭টি

থানা

৮টি

জাতীয় সংসদের আসন

৪টি

ইউনিয়ন

৭৮টি

নামকরণ

অন্যান্য জেলার মতাে সাতক্ষীরা জেলার নামকরণ। নিয়েও রয়েছে বিভিন্ন মত। জনশ্রুতি আছে, নদীয়ার। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের এক কর্মচারী বিষ্ণুরাম চক্রবর্তী নিলামে বুড়ন পরগনা কিনে তাঁর অন্তর্গত সাতঘরিয়া গ্রামে বাড়ি তৈরি করেন, সেখান থেকেই সাতক্ষীরা নামের উৎপত্তি। ১৮৫২ সালে মহকুমা হিসেবে সাতক্ষীরা আত্মপ্রকাশ লাভ করলেও কলারােয়াতে ছিল এর সদর দপ্তর। ১৮৬১ সালে ইংরেজ শাসকেরা তাঁদের পরিচিত সাতঘরিয়াতেই প্রধান কার্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন। ইতিমধ্যেই সাতঘরিয়া ইংরেজ রাজকর্মচারীদের মুখে ‘সাতক্ষীরা’ নামে উচ্চারিত হতে থাকে।

ইতিহাস

সাতক্ষীরা বাংলাদেশের প্রাচীন জনপদের অংশ। এ জনবসতি প্রাচীনকালে খ্যাত ছিল বুড়ন দ্বীপ নামে। প্রাচীন ইতিহাস ও মানচিত্রে বুড়ন দ্বীপের পাশে চন্দ্রদ্বীপ, মধুদ্বীপ, সূর্যদ্বীপ, সঙ্গদ্বীপ, জয়দ্বীপ ইত্যাদি নামে খ্যাত ছােট ছােট ভূখণ্ডের অবস্থান পাওয়া যায়। সপ্তম শতকের গােড়ার দিকে খুব সম্ভবত এই জেলা গৌড়াধিপতি শশাঙ্কের কর্তৃত্বাধীনে আসে। প্রাচীন বাংলার সমতট রাজ্যের অংশ ছিল বর্তমানের সাতক্ষীরা জেলা।

মুসলিম শাসন শুরু হওয়ার পর ১৩৩৯ খ্রিষ্টাব্দে শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহ যখন স্বাধীনতা ঘােষণা করেন, তখন থেকে সাতক্ষীরা অঞ্চল চলে যায় শাহি বংশের অধীনে। পরে ১৪৪২ খ্রিষ্টাব্দে খান জাহান আলী এই অঞ্চল জয় করে নিলে সাতক্ষীরা তাঁর অন্তর্ভুক্ত হয়। এরপর রাজা বিক্রমাদিত্য যশাের রাজ্য স্থাপন করলে সাতক্ষীরা এর অংশ হয়।

বিক্রমাদিত্যের পুত্র প্রতাপাদিত্যের পতনের পর খুলনা-সাতক্ষীরা অঞ্চল চলে যায় জমিদারদের নিয়ন্ত্রণে। ১৮৫২ সালে মহকুমার মর্যাদা পাওয়ার পর সাতক্ষীরা যুক্ত হয় নদীয়া জেলার সঙ্গে। আবার ১৮৬১ সালে নদীয়া থেকে সাতক্ষীরাকে বিযুক্ত করে যুক্ত করা হয় চব্বিশ পরগনার সঙ্গে। ১৮৮২ সালে খুলনা জেলা প্রতিষ্ঠিত হলে সাতক্ষীরা এর মহকুমা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়।

ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও অর্থনীতি

সাতক্ষীরার ঐতিহ্য নানা কিংবদন্তির প্রবহমান ধারায় সজীব। বঙ্গোপসাগরের আঁচলছোঁয়া সুন্দরবন, আর সুন্দরবনকে বুকে নিয়ে সমৃদ্ধ এখানকার প্রকৃতি, এমনকি অর্থনীতিও। সুন্দরবনের চোখজুড়ানাে চিত্রল হরিণ, বিশ্ববিখ্যাত ডােরাকাটা বাঘ থেকে শুরু করে বনদেবী, রাজা প্রতাপাদিত্যের জাহাজঘাটা, বিভিন্ন মােগলীয় কীর্তি, অসংখ্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, পুরাকালের কাহিনি, জারি-সারি, পালাগান, পালকি গান এসবের মধ্যেই সাতক্ষীরার মানুষের আত্মিক পরিচয় প্রােথিত রয়েছে।

গ্রামবাংলার লােকজ ঐতিহ্যই এখন পর্যন্ত সাতক্ষীরার সংস্কৃতির মূলধারাটি বহন করে চলেছে। খুব সহজেই এখানে মিলিত হয়েছে লৌকিক আচার-আচরণের সঙ্গে পৌরাণিকত্ব। সাতক্ষীরায় বছরজুড়ে চলে বিভিন্ন ধরনের মেলা। দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় মেলাটি বসে সাতক্ষীরা শহরেই।

পলাশপােল, গুড়পুকুরের পাড়ে গুড়পুকুরের মেলা। প্রতিবছর বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুসারে ভাদ্র মাসের শেষ দিনে অনুষ্ঠিত হয় হিন্দুদের মনসাপূজা। এই পূজাকে কেন্দ্র করে ৩০০ বছরের বেশি সময় ধরে সাতক্ষীরায় অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এই গুড়পুকুরের মেলা। সাতক্ষীরা জেলা অর্থনীতিতে বরাবরই স্বনির্ভর।

ব্রিটিশ যুগ থেকেই উপঢৌকন হিসেবে চব্বিশ পরগনা (বর্তমানের সাতক্ষীরা) লাভের পর অচিরেই নানাবিধ কৃষিপণ্য, গৃহপালিত পশু, নােনা ও মিষ্টিপানির মাছ এবং সুন্দরবনের কাঠ, মধু ও পশুর চামড়া সাতক্ষীরার অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি হয়ে ওঠে। মূলত মাছ চাষই সাতক্ষীরার অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। বিশেষ করে চিংড়ি চাষ। বাংলাদেশ থেকে ইউরােপসহ বহির্বিশ্বে রপ্তানি করা ৭০ শতাংশ চিংড়ি সাতক্ষীরা থেকে উৎপাদিত হয়। সাতক্ষীরার বাগদা ও গলদা চিংড়ি বিশ্বের অনেক জায়গায় হােয়াইট গােল্ড নামে পরিচিত।

দর্শনীয় স্থান

নদ-নদী

দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ : সাতক্ষীরা জেলার হাঁড়িভাঙ্গা নদীর মােহনা অবস্থিত। এ দ্বীপের অপর নাম হচ্ছে নিউমুর বা পূর্বাশা। এই দ্বীপ নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিরােধ রয়েছে।

বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ

Scroll to Top