জন মানুষের কল্যাণে সুপরিকল্পিত আবাসন গড়ে তোলার লক্ষে আমি এখনোও কাজ করছি। সুষ্ঠু বসতির মাঝে বিশ্বমানের শিক্ষা কার্যμম গড়ে তোলা আমার জীবনের লক্ষ ও আদর্শ। আজ সাতক্ষীরা জেলা সমিতির দ্বিতীয় ডাইরেক্টরির বাণী লিখতে গিয়ে আমার মনে সেই সাতঘরিয়ার গোড়ার কথা মনে পড়ে, কি করে সাতঘরিয়া থেকে সাতক্ষীরায় রূপান্তরিত হল!
সাতক্ষীরা জেলার নাম করণের মধ্যে প্রম মতটি হল, চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের আমলে নদীয়ার রাজা কৃষ্ণ চন্দ্রের এক কর্মচারী বিশু রাম চμবর্তী নিলামে বড়–ণ/চড়–ণ পরগনা কিনে তার অন্তর্গত সাতঘরিয়া গ্রামে (কলারোয়া) বসতি তৈরি করেন। সাতক্ষীরা মহামার প্রকৃত জন্ম ১৮৫২ সনে, যা আমার এইচএসসি পাশের একশত বছর পূর্বে (অন্য মতান্তর ১৮৬১ সনে)। প্রম মহাকুমার ঝ.উ.ঙ হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন নবাব আব্দুল লতিফ। ইংরেজি কর্মচারীদের মুখে মুখে সাতঘরিয়া থেকে সাতক্ষীরা উচ্চারিত হতে থাকে। ইংরেজ আমলে সাতক্ষীরা একটি খরাও দরিদ্র পীড়িত অঞ্চল হিসাবে বিবেচিত হতো, কিন্তু সেই সাতক্ষীরা এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে ও সুন্দরবন (ইবধঁঃরভঁষ ঋড়ৎবংঃ) ডড়ৎষফ ঐবৎরঃধমব নির্দেশিত এলাকা যা, বন ও মৎস্য সম্পদের সুবিশাল চারণ ক্ষেত্র বলে পরিচিত।
উক্ত প্রেক্ষিতে বর্তমান সাতক্ষীরা জেলা সমিতির দায়িত্বও কর্তব্য অনেক বেশি। এই সমিতি অবিভক্ত বাংলায় ১৯৪৬ সালে কলকাতায় জন্ম কিন্তু অন্য সমিতির মত ততটা প্রসার লাভ করতে পারেনি। সাতক্ষীরা উপজেলার মোট আয়তন ১৪৭৪ বর্গমাইল, মোট জনসংখ্যা প্রায় ২২ লাখ। এই অঞ্চলের মোট স্বাক্ষরতার হার ৫২.০১ শতাংশ। সাতক্ষীরা জেলার দুইটি পৌরসভা এখনো অপরিকল্পিত ও অনুনড়বত, বাকি পাঁচটা উপজেলার উনড়বয়ন প্রয়োজন। উপজেলার সার্বিক উনড়বতির জন্য মহাপরিকল্পনা আশু প্রয়োজন। সেই সাথে গ্রামীন পরিকল্পনা একান্ত দরকার। এবার খুব সুখের ও গর্বের বিষয় যে আমাদের সমিতি, ঢাকা রেখে এবার সাতক্ষীরা জেলা শহরে বাৎসরিক পিকনিক কার্যμম পরিচালনা করে এসেছে, আর এটাই হওয়া উচিত সমিতির আদর্শ। কিছু কিছু সময় আমরা সরকারি পর্যায়ে মানুষের সাথে (স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ) মত বিনিময় করে আমাদের উনড়বতির পথ বিবেচনায় বেছে নিতে পারি।
উনড়বতির জন্য শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। আমি দীর্ঘদিন ধরে আমারই সাতক্ষীরার মাছখোলা গ্রামে একটি হাইস্কুলের পরিচালনার সাথে সম্পৃক্ত। সেই একই স্থানে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও তার কার্যμম চালিয়ে আসছে। আমার সেই প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকগণ অক্লান্ত চেষ্টার মাধ্যমে আশানুরূপ সফলতা আনতে পারছে না। আমার বার বার মনে হয় যে এই সমাজে ও স্কুলে প্রায়ত দরবেশ আলী স্যারের মত শিক্ষক দরকার, যার হাত ধরে আমরা মানুষ হয়েছি। আমি যখন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাই, তখন আমার নিজ পরিবেশ থেকে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়ে ছিল। কিন্তু, আমার প্রাণ বল ছিল, আমার পীর-কেবলা খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র:) আমাকে নির্দেশ প্রদান করে ছিলেন যে বৃহত্তম খুলনায় একটি বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলো। সে কারণেই, এতবাধা সত্তে¡ও আমি স্বস্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার এই মহৎ কাজ আরম্ভ করতে পেরেছি। এর দরুন ওই অঞ্চলে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু গ্রাজুয়েট আজ দেশেও বিদেশে দাপট সহকারে চাকরিতে কর্মরত আছে। প্রম থেকেই আমার উদ্দেশ্য ছিল বুয়েটের আদলে একটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার এবং আল্লাহর অশেষ রহমতে সে রকমটাই হয়েছে। শুধু ইঞ্জিনিয়ারিং ও আরবান এন্ড রিজিওনাল প্ল্যানিং বিষয়ক ডিপার্টমেন্ট অন্তর্ভুক্ত করেই আমি থেমে যাই নি, সাথে সাথে যুগোপযোগী ব্যবসা প্রশাসন বিভাগ এর যাত্রা শুরু হয়। এছাড়া ওই অঞ্চলের প্রয়োজন মাথায় রেখে Forestry and Wood Technology and Fisheries ডিপার্টমেন্ট অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এছাড়াও কিছু কিছু ডিপার্টমেন্ট সময়ের সাথে সাথে খোলা হয় এবং কিছু কিছু ডিপার্টমেন্ট যা পাইপ লাইনের মধ্যে ছিল তা পরবর্তী সময়ে আরম্ভ করা হয়। উনড়বত শিক্ষার বিকল্প নেই ও সাতক্ষীরা জেলার সার্বিক উনড়বতি করতে হলে শিক্ষা, জনসংখ্যা, সড়ক ও রেলপথ, বন ও মাছের ঘের উনড়বয়ন, কৃষি উনড়বয়ন ও গ্রামীন পরিকল্পনা ও গবেষণার একান্ত দরকার। আমাদের সময় ক্ষেপণের অবকাশ নেই। সাতক্ষীরা সমিতি এখন মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। তার একটা স্থায়ী ঠিকানা হয়েছে ও ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষার মান উনড়বয়ন করতে দৃঢ়ভাবে কাজ করতে হবে। তাই আসুন আমরা সবাই এক সাথে কাজ করি, হাতে হাত মিলিয়ে। গত দেড় বৎসরে করোনা মহামারীর কারণে কবির ভাষায় বলবো –
“বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক
মুছে যাক গøানি
ঘুচে যাক জরা
এসো হে বৈশাখ এসো এসোও”
এই প্রেক্ষিতে, আমি বর্তমান সভাপতি ও প্রাক্তন সভাপতিদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। তাদের হাত ধরেই সমিতি এগিয়ে যাচ্ছে ও যাবে। এছাড়াও নির্বাহী পরিষদেও সবাইকে প্রাণঢালা ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানাই।